ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে মরণোত্তর দেহদান বৃদ্ধ বাবার : ইচ্ছা পূরণ করলেন সন্তানেরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাধন পালের দেহ দান করে প্রথম দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো। ইচ্ছা পূরণ করতে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাবার দেহ দান করলেন সন্তানেরা। মৃতের নাম সাধন পাল (৮০)। গত ২৮ আগস্ট মঙ্গলবার রাত ৩ টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এই সাধন পাল কক্সবাজারের রামু উপজেলাধীন ঈদগড় হাসনাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের খেতাবপ্রাপ্ত) । দেহ দানের পেছনের ইতিহাস।

‘আমি ডাক্তারি পড়েছি। আর ডাক্তারি পড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মানবদেহ সম্বন্ধে জানা। আমি বাড়িতে এসে বাবাকে বললাম, বাবা আমার একটি মানব কঙ্কাল লাগবে, যা অনেক দাম।’ সামান্য বেতনের শিক্ষক বাবা আমাকে বললেন, আমার এত টাকা নেই। কোন সহপাঠির সাহায্য নিয়ে মানবদেহ সম্বন্ধে জেনে নে। পরে তা আমি পুষিয়ে দেব। মৃত্যুর পর আমার দেহ মেডিকেল কলেজে দান করবো।

তিনি মরণোওর দেহদান এর অঙ্গীকার করেছিলেন। যে কথা সেই কাজ তিনি লিখিতভাবে তার দেহ দান করে দেন। ’এমন কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সাধন পালের সন্তান কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিও বিভাগের প্রধান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ বিধান পাল।

পরিবারের সদস্যরা সাধন পালের ইচ্ছা অনুযায়ী তার মৃতদেহ গতকাল ২৯ আগষ্ট দুপুরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করেন। মৃতদেহটি গ্রহণ করেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পক্ষে প্রফেসর ডা: মায়েনু।

এসময় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে তত্বাবধায়ক ডা: পু চ নু বলেন, যারা মহান ও মহৎ মানুষ, তারাই পারে দেহদান করতে। সাধন পাল তার দেহ দান করে শুধু মহত্বের পরিচয় দেননি, তিনি কক্সবাজারে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।

কারণ কক্সবাজারে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি দেহ দান করার মতো মহত্ব দেখিয়েছেন। এখন তার কারনে অনেকে এগিয়ে আসবেন। দেহদান একজন মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগ। ওই দেহ আমাদের কলেজের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার জন্য কাজে লাগানো হবে।

ডা: মায়েনু জানান, যে কোন মেডিকেল কলেজে মানবদেহের অংশবিশেষ খুব প্রয়োজন। পাঠদানের প্রয়োজনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনস্বীকার্য এটি। সাধন পালের দানকৃত দেহটির কল্যানে ভালো চিকিৎসক তৈরি হবে আর এসব চিকিৎকদের কাছ থেকে ভালো চিকিৎসা পাবেন রোগিরা। চিকিৎসকদের অবদানের অংশে দেহদানকারি সাধন পালদের নামও থাকবে আজীবন।

মহাত্যাগী সাধন পালের ধন্য সন্তানরা হচ্ছেন- কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিও বিভাগের প্রধান ও বিএমএ কক্সবাজার জেলা শাখার সহ-সভাপতি ডা: বিধান পাল, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরি পাল, এনজিও কর্মকর্তা লেখক ও সাংবাদিক নির্বান পাল এবং সাধন পালের স্ত্রী অবসর প্রাপ্ত (শ্রেষ্ঠ শিক্ষক) কল্পনা রানী পাল।

পাঠকের মতামত: